ইমোশনাল ব্ল্যাকহোল
ইমোশনাল ব্ল্যাকহোলঃ একাকীত্বের ব্যবচ্ছেদ
আসিফ সাহেব কর্পোরেট কর্মকর্তা, কাজকে ভালোবাসেন, সহকর্মীরা তাকে চেনে কাজ পাগল মানুষ হিসেবে, পরিবারের লোকজন তাকে সমঝে চলে, কারণ কাজ ছাড়া কিছুই বুঝেন না উনি। প্রথম দিকে নিজেও বিষয়টা খুব উপভোগ করছিলেন, বিশেষ করে নিজ পেশার সাফল্য। কিছুদিন আগে উনি খেয়াল করলেন হুট করেই কেমন জানি খালি খালি লাগছে। বোর্ড মিটিং হচ্ছে কিংবা পারিবারিক কোন প্রোগ্রাম, কিন্তু সবখানে নিজেকে বেমানান লাগে, মনে হয় এরা কেউই বুঝতে পারছেন না আসিফ সাহেব কে, সবাই শুধু বাইরের সৌজন্যতা দেখাচ্ছে, কিন্তু কেউ জানার চেষ্টা করছে না আসিফ সাহেবের কেমন লাগছে! নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে ইদানিং, যখনি একটু ব্রেক পান বা বাসায় একা সময় কাটান, তখন জেকে বসে একাকীত্বের এক তীব্র কালো ছায়া, মনে হয় মরে গেলেই বরং ভালো হতো। অথচ উনি নিজেও জানেন না কেন এমন হচ্ছে?
সাফিনা ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে, তৃতীয় বর্ষে। মোটামুটি পরিচিত মুখ ক্যাম্পাসে, বিভিন্ন সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কারণে ওর নেটওয়ার্ক বেশ সমৃদ্ধ। নিজের বয়ফ্রেন্ড নিয়েও সে খুব সচেতন, ক্যাম্পাসে অনেকেই তাদের কে আদর্শ কাপল হিসেবে তকমা দেয়। অথচ ইদানিং প্রায়ই ওর ভীষণ একা লাগছে, কাউকে বুঝে উঠতে পারছে না। যখনি একা থাকে হুট করেই প্রচন্ড কান্না আসে। বয়ফ্রেন্ড কে দু একবার বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু মনে হলো কিছুই বুঝে নি, তারপর থেকে বলা বন্ধ করে দিয়েছে। বেস্ট ফ্রেন্ড বা বিভিন্ন সার্কেল, কেউই আসলে বুঝতে পারে নি সাফিনা কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কেননা সে নিজেও জানে না কেন এতটা একাকীত্ব বোধ হচ্ছে। অনুভূতিটা মাঝে মাঝে এতটাই তীব্র আকার ধারণ করে যে মনে হয় মরে গেলেই ভালো হতো! বিশেষ করে রাতে যখন একা থাকে তখন।
তূর্য নবম শ্রেণীতে পড়ে, স্কুলে সে ভালো ছাত্র হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। বাবা-মা ও খুব খুশি ওর রেজাল্ট নিয়ে। তাদের ইচ্ছা ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন, তূর্য নিজেও চায় ডাক্তার হতে, কারণ সে বাবা মাকে ভালোবাসে। ভালো ছাত্র হওয়ার সুবাদে শিক্ষকগণ তাকে আলাদা গুরুত্ব দেয়, ক্লাসের প্রায় সবাই ওর সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে চলে। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেই তূর্য অনুভব করে ও ভীষন একা। কেউ কে খেলার জন্য ডেকে নেয় না, নতুন কোন ভিডিও গেম আসলে সেই আড্ডায় তূর্য কে কেউ ডাকে না। ওর যারা বন্ধু তারা সবাই পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত, কোথাও কেউ নেই যে ওর অনুভূতির কথাগুলো শুনবে। দিনে দিনে ভীষণ শূন্য অনুভব করে সে, বিশেষ করে টিফিন টাইম বা ছুটির সময় যখন সবাই দল বেধে খেলতে যায় কিংবা বাড়ি ফিরে, তূর্য দেখে তার সাথে কেউ নেই। হুট করে ধাক্কা খায় তীব্র একাকীত্বের দেয়ালে, নিজেকে ভীষণ ক্ষুদ্র ও অপ্রয়োজনীয় অনুভব করে তূর্য! এই অনুভূতিটা কতটা ভয়ংকর সেটা সে কাউকে বলতে পারছে না, কিন্তু যখন আসে তখন সব ছেড়ে ছুড়ে পালিয়ে যেতে চায় তূর্য।
আসিফ, সাফিনা কিংবা তূর্য, তিনজন ভিন্ন ভিন্ন মানুষ হলেও একটি জায়গায় একই বিন্দুতে মিলেছেন, সেটি হলো একাকীত্ববোধ। মাঝে মাঝে এর তীব্রতা এতটাই বেশি থাকে যে আমাদের মনে হয় যেকোন মূল্যে এর থেকে বের হতে পারলেই বেচেঁ যেতে পারতাম। তাই অনেকেই বেছে নেন নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিষণ্ণতা, আত্মহত্যা এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সাথে একাকীত্ব বোধের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, যা নিয়ে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা সকলেই বেশ উদ্বিগ্ন। তাহলে এই একাকীত্ববোধ জিনিসটা আসলে কি?
ইমোশনাল ব্ল্যাকহোল নিয়ে কথা বলার সময় বেশ কয়েকটি ব্ল্যাকহোলের কথা উল্লেখ করেছিলাম, তাদের মধ্যে একটি ছিল এই একাকীত্ব বা loneliness! একাকীত্ব বা loneliness এর কেতাবি সংজ্ঞা অনুযায়ী মানুষের মাঝে সামাজিক বন্ধন বা সংযোগ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যখন অপূর্ণ থাকে তখন যে অনুভূতি হয় তাকে একাকীত্ব বলে। এই অনুভূতিকে অনেকে *সামাজিক কষ্ট” নামেও অভিহিত করে থাকে। কিন্তু আমি একে পুরোপুরি সামাজিক কষ্ট বলতে নারাজ, কেননা একাকীত্বের অনুভূতির ব্যপ্তি বা প্রভাব ব্যক্তির এমন এক অভিজ্ঞতা যা শুধুই ব্যক্তিগত সূক্ষ্ম এক ধারা যা সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না। যেহেতু ব্যক্তির অনুভূতি, চিন্তা ও আচরণের প্রাথমিক উৎস সে নিজে, সমাজ হলো তার দ্বিতীয় স্তর তাই “সামাজিক কষ্ট” ধারণার বাইরে আমি জোর দিবো ব্যক্তিগত অনুভূতির দিকে।
অনুভূতি এমন এক বহমান অভিজ্ঞতা যার মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত একজন মানুষ যাচ্ছে, বলা যায় মানুষ যেমন বায়ুর সমুদ্রে ডুবে আছে, তেমনি একজন ব্যক্তি প্রতিনিয়ত কোন না কোন অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে তার চিন্তা বা আচরণের কারণে যে অনুভূতিটুকু তীব্র হচ্ছে সেটাই সে শারীরিক ও মানসিক ভাবে আলাদা করতে পারছে। একাকীত্বকে বলা হয় এমনি এক অনুভূতি যেখানে ব্যক্তি চিন্তা করে সে একা, তাকে বুঝতে পারার মত দ্বিতীয় কোন সত্বা নেই। এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের অনুভূতিটুকু নিজেই বুঝতে পারে না, বিশেষ করে অন্য কোন অনুভূতি যখন তীব্র থাকে যেমন অনিরাপদ, কষ্ট, রাগ বা লজ্জা কিন্তু সেটা বুঝতে না পারলে তখন সে ভয় পেয়ে যায়, তখন তাকে গ্রাস করে একাকীত্ব বোধ। তার মনে হয় তাকে বুঝার কেউ নেই, আসলেই কি কেউ নেই?
এইখান থেকে আসা তার চাহিদা, অন্য কেউ তাকে বুঝুক, তার অনুভূতিকে বুঝে সে অনুযায়ী আচরণ করুক বা কথা বলুক, যাকে আমরা বলছি অনুভূতির মূল্যায়ন (ভ্যালিডেশন)। তাহলে ধীরে ধীরে সে নিরাপদ বোধ করে এবং সে চায় ওই মানুষটি তার জীবনে থাকুক, যে তার তীব্র অনুভূতিকে গুলো কে বুঝতে সাহায্য করবে। যখনি সেই মানুষটি অনুপস্থিত থাকে তখনই তাকে আবার গ্রাস করে একাকীত্ব বোধ।
আসিফ, সাফিনা বা তূর্য, এদের অনুভূতিগুলো কে যদি আমরা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে পর্যবেক্ষণ করি তবে দেখবো তাদের বয়স, পেশা কিংবা প্রেক্ষাপট ভিন্ন থাকা সত্ত্বেও যে অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেটা এক, অর্থাৎ তাদের অনুভূতি কে কেউ বুঝতে পারছে না, এমনকি তারা নিজেরাও ফিগার আউট করতে পারছে না কেন এমন লাগছে। হুটহাট করে আসা এই তীব্র একাকীত্ব বোধ কে আমি বলতে পারি loneliness attack যেমন টা আমাদের প্যানিক অ্যাটাক হয়, অনেকটা তেমন। Loneliness Attack এমন একটি অবস্থা যেখানে খুব নিজেকে খুব অসহায় লাগে, পরিত্যক্ত মনে হয়, চারিদিকে বহু মানুষ থাকা সত্ত্বেও মনে হয় আমি ভীষন একা।
কেন হয় এই একাকীত্ববোধ? হুট করেই বা কেন একাকীত্ব বোধ হয়? আগে তো এমন লাগে নি। কারণ যখন আমাদের পূর্বেকার অনুভূতিগুলো প্রসেস হয় না, হেলদি ভাবে রিজলভ হয় না তখন সেগুলোর প্রভাব আমাদের অবচেতন মনে রয়ে যায়। যা পরবর্তীতে অন্য কোন সময় বেরিয়ে আসে, তখন হয়তো আমরা কারও সাথে শেয়ার করতে পারি না।
যেমন,
- মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যু অর্থাৎ কোন মানসিক রোগ বা ডিজঅর্ডার এর কারণে সৃষ্ট হওয়া তীব্র অনুভূতি যা অনেক সময় আমরা সঠিক ভাবে ডিল করতে পারি না। যায় ফলে পরবর্তী সময়ে একাকীত্ব অনুভব করতে পারি।
 - হুট করে কাছের কারও মৃত্যু বা প্রিয়জনের সাথে বিচ্ছেদ আমাদের মাঝে একাকীত্ব বোধ তৈরি করতে পারে।
 - ছোটবেলার কোন ট্রমা বা স্মৃতি যা আমাদের কষ্টকর অনুভূতিগুলো কে আরো তীব্র আকার ধারণ করতে প্রভাবিত করে। তখন আমরা একাকীত্ব বোধ করতে পারি, কেননা তখন মনে হয় এত কষ্ট শুধু আমিই অনুভব করছি।
 - ব্যক্তিগত জীবনে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোন সম্পর্ক আমরা তৈরি করতে পারি না তখন একা লাগতে পারে, যেমন বন্ধু, পার্টনার বা পরিবারের এমন কোন সম্পর্ক যদি তৈরি না হয় যেখানে নির্দ্বিধায় নিজের অনুভূতিগুলো শেয়ার করা যায় তবে ভীষণ একা লাগবে আমাদের।
 - অনেক সময় এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন নিজেকে একা মনে হবে, যেমন হুট করে অপরিচিত স্থানে কোন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লে, লিফটে একা আটকে গেলে, এমন কোন সামাজিক বা পেশাগত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে যেখানে পরিচিত কেউ থাকে না।
 - আত্মবিশ্বাস কমে গেলে, যখন নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা থাকে এবং যেকোন প্রেক্ষাপটে নিজেকে অযোগ্য ভাবলে তখন আমাদের একা লাগতে পারে।
 - বৈষম্যের শিকার হলে, যেখানে আপনাকে আলাদা ভাবে ট্রিট করা হচ্ছে (নেতিবাচক বা ইতিবাচক, দুটো অর্থেই), তখন নিজেকে একা লাগতে পারে।
 
এছাড়াও নিজের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করলে, নির্যাতিত সম্প্রদায়ের সদস্য হলে, নিজ অঞ্চলে সংখ্যালঘু হলে অনেক সময় একাকীত্ব বোধ আমাদের মাঝে তীব্র ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
এখন সকলের একাকীত্ব বোধ কি একই রকমের? না, একই রকমের না। যেহেতু আমরা ইমোশনালি প্রতিক্রিয়া করি, আর এর সাথে যুক্ত থাকে আমাদের চিন্তা, তাই বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমাদের চিন্তা প্রভাবিত হয়, আর সে অনুযায়ী আমাদের একাকীত্ব বোধেরও ভিন্নতা থাকে।
যেমন:
- সামাজিক ভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে, অর্থাৎ সমাজে আমার কানেকশন কম, আমি একা থাকি অধিকাংশ সময়। ফলে আমার মাঝে একাকীত্ব বোধ তৈরি হতে পারে। তবে স্বেচ্ছায় একা থাকা আর একাকীত্ব বোধ হওয়া সম্পূর্ন আলাদা জিনিস। আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা ইন্ট্রোভার্ট, নিজেদের কে খুব বেশি প্রকাশ করেন না। ফলে তাদের সামাজিক সম্পর্ক তুলনামূলক কম তৈরি হয়। এই জন্যে অনেক সময়ই নিজেকে একা লাগতে পারে, মনে হতে পারে আমি বিচ্ছিন্ন একজন মানুষ।
 - ইমোশনাল বা আবেগীয় একাকীত্ব, যা সরাসরি যুক্ত আমাদের অ্যাটাচমেন্ট ফিগারের সাথে। অর্থাৎ বাবা মা কিংবা রোমান্টিক পার্টনারের সাথে যখন আমরা কানেকটেড ফিল করি না তখন আমাদের মাঝে যে খারাপ লাগার অন্যতম কারণ নিজেকে একা মনে হয়। আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সাথে যখন গভীর কোন আবেগীয় সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি না তখন আমাদের মাঝে তীব্র একাকীত্ব বোধ কাজ করে। যেমন অনেকেই খেয়াল করবেন বাবা মা বা রোমান্টিক পার্টনার যখন আপনাকে বুঝতে পারে না তখন অসহায় লাগে, মনে হয় কেউ আমাকে বুঝতেছে না। ইমোশনাল একাকীত্ব বোধ এর কারণ হলো নিজের অনুভূতিগুলোকে যখন আমরা শেয়ার করতে পারি না, বিশেষ করে আমাদের এমন কিছু তীব্র অনুভূতি রয়েছে যা শুধুই আমাদের নিজস্ব, আমরা চাই এমন কারও সাথে শেয়ার করতে যার উপর ভরসা করতে পারি যেমন পরিবারের সদস্য, রোমান্টিক পার্টনার বা এমন কাছের কেউ। কিন্তু জাজমেন্ট এর শিকার হওয়ার ভয়, ট্রাস্ট ইস্যু এবং অনিরাপদ অনুভব করায় অনেকক্ষেত্রে আমরা নিজেদের এই ব্যক্তিগত সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো কারও সাথে শেয়ার করতে পারি না, এমনকি বেস্ট ফ্রেন্ড, পার্টনার বা পরিবারের কারও সাথেও শেয়ার করতে পারি না। তখন নিজেকে দেখি আমরা একা একজন ব্যক্তি যে চাইলেও কারও সাথে শেয়ার করতে পারছে না। ভীষণ একা এমন এক সত্ত্বা যার তীব্র অনুভূতিগুলো নিজে নিজে প্রসেস করতে হচ্ছে।
 - পারিবারিক একাকীত্ব বোধ অর্থাৎ যখন কেউ মনে করে পরিবারের সাথে কানেকটেড ফিল করে না। অর্থাৎ পরিবার একটি সোশ্যাল ইউনিট যেখানে ব্যক্তি জন্ম গ্রহণ করে এবং বেড়ে উঠে, কিন্তু অনেক সময় সে নিজেকে এই পরিবারের সদস্য হিসেবে মনে নাও করতে পারে, এমনকি যেকোন পরিবারে সে নিজেকে আনফিট মনে করতে পারে।
 - রোমান্টিক একাকীত্ব অর্থাৎ একজন ব্যক্তির পেশাগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন চমৎকার হলেও রোমান্টিক দিক থেকে সে একাকীত্ব অনুভব করতে পারে। তার নিজের যে চাওয়া, ভালোবাসার মানুষের সংস্পর্শে থাকা সেটি পূর্ণ না হলে অনেক সময় একা অনুভব করতে পারে নিজেকে। এটি কিশোর কিশোরী থেকে শুরু করে অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মাঝে দেখা দেয়, বিশেষ করে যারা কোন প্রকার রোমান্টিক সম্পর্কে নেই।
 
এছাড়াও আর নানা ধরনের একাকীত্ব বোধ রয়েছে যা আমাদের মাঝে যেকোন প্রেক্ষাপটে তৈরি হতে পারে। এতকিছু বলার কারণ হলো নিজের একাকীত্ব বোধ কে বুঝার চেষ্টা করুন। ঠিক কি কারণে আপনি নিজেকে একা ভাবছেন? তাহলে আপনি সহজেই আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ বা করণীয় সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
নিজের অনুভূতিকে চিহ্নিত করুন অর্থাৎ প্রথমে বুঝার চেষ্টা করুন আপনার মাঝে ঠিক কি কি অনুভূতি কাজ করছে। ঠিক কি ধরনের একাকীত্ব বোধ কাজ করছে? কোন প্রকার জাজমেন্ট করা ছাড়াই নিজের অনুভূতিগুলোকে চিহ্নিত করুন। যেকোন ধরনের অনুভূতি কাজ করুক না কেন নিজেকে শান্ত রেখে সেগুলো কে অবজার্ভ করুন। প্রয়োজনে মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন চর্চা করুন।
শান্ত ভাবে নিজের আচরণ, চিন্তা, ও অনুভূতিগুলোকে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে পারবেন ঠিক কি কারণে আপনার মাঝে এই তীব্র একাকীত্ব বোধ তৈরি হয়। নিজের এই অনুভূতির প্রতি সহমর্মী হয়ে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি এমন মানসিক ও সামাজিক দক্ষতা তৈরি করুন যাতে আপনি আরেকজন মানুষের সাথে সহমর্মীতামূলক সংযোগ স্থাপন করতে পারেন, যে আপনার অনুভূতিগুলোকে বুঝবে এবং আপনিও তার অনুভূতিগুলোকে বুঝে পাশে থাকতে পারবেন। প্রয়োজনে প্রফেশনাল সাইকোলজিস্ট এর সাহায্য নিন, কেননা অনেক সময় এমনকি ইস্যু থাকে যা নিজে নিজে সলভ করা যায় না, প্রফেশনাল এর সাহায্য দরকার হয়। তার আগে পর্যন্ত নিজের যত্ন নিন।
সর্বশেষ, ভাবুন তো, আপনি এমন একটি জলাশয়ে পরে গিয়েছেন যেখানে পানির নিচে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ধীরে ধীরে আপনি তলিয়ে যাচ্ছেন গভীর থেকে গভীরে। চেষ্টা করছেন সাঁতরে উপরে উঠার কিন্তু অন্ধকার তলদেশ থেকে পানির স্রোত এতই তীব্র ভাবে টানছে যে আপনি অসহায় বোধ করছেন। এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন, তলিয়ে যাচ্ছে গভীর এক অন্ধকারে। যেন এক বিশাল ব্ল্যাকহোল আপনাকে গ্রাস করছে, আপনি সেখানে একা, ভীষণ একা, ক্ষুদ্র ও পরিত্যক্ত! সেই অন্ধকার ভেদ করে উপর থেকে একটি হাত আপনার দিকে আসছে, আপনাকে উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে, সেই হাতটি ধরবেন কিনা সিদ্ধান্ত আপনার।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য।
বিনীত
ফয়সাল আহমেদ রাফি
ফাউন্ডার এন্ড চিফ সাইকোলজিস্ট
ফয়সাল রাফি এন্ড এসোসিয়েটস
বি: দ্র: এই লেখার সকল চরিত্র কাল্পনিক। যথাসম্ভব সকল প্রকার টেকনিক্যাল টার্ম এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং কোন স্ট্যাটিস্টিক্যাল ডাটা ব্যবহার করা হয় নি, তাই কোন প্রকার রেফারেন্স দেওয়ার প্রয়োজন মনে হয় নি।





